পেনসিলভানিয়া, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

সর্বশেষ:
জামায়াতে যোগ দিলেন অর্ধশতাধিক বিএনপি–জাপা নেতাকর্মী জাপা ও জেপির নেতৃত্বে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ৮ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস আজ আমার হায়াত কমিয়ে হলেও খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে দেন জোট গঠনের বিষয়ে যা বললেন সারজিস বিএনপির সঙ্গে ২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করল বাংলাদেশ লেবার পার্টি ১০ ডিসেম্বর তফসিল নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে না, বরং পুনর্গঠনের পথে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রয়েছে যেসব আধুনিক সুবিধা দেশে এল তারেক রহমানের ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার গাড়ি, বিআরটিএতে নিবন্ধন সম্পন্ন পুলিশ কমিশন গঠন হচ্ছে, অধ্যাদেশ অনুমোদন নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে আম জনতার দল, চেয়েছে প্রজাপতি প্রতীক অক্সফোর্ড ইউনিয়নের আমন্ত্রণ পেলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন কমান্ডো এনএসজিসহ ২৪ ভারতীয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

টানা তৃতীয় জয়েও বড় ধাক্কার বিস্ময় মোদীর বিজেপি’র

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০২:৩২ পিএম, ০৪ জুন, ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী মোদী টানা তৃতীয়বারের মত ভারতের ক্ষমতায় আসতে চললেও বিরোধী শিবিরের অপ্রত্যাশিত সাফল্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোয় বিস্ময়কর ধাক্কা খেয়েছে তার দল ভারতীয় জনতা পার্টি।

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে এবার ৪০০ আসন জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নির্বাচনী প্রচার থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত 'আবকি বার ৪০০ পার' স্লোগান তুলেছিল মোদীর দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) শিবির। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী মোদী টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় বসতে চললেও ভোটের অপ্রত্যাশিত খারাপ ফলে বিস্ময়কর ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি।


মোদীর টার্গেট ছিল বিজেপি’র ৩৭০ আসন। আর এনডিএ জোটের জন্য ৪০০ আসন। কিন্তু বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলল। ৪০০ তো দূর, ৩০০-র গণ্ডিও পেরোল না বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) এর আসনসংখ্যা। এমনকী ২০১৯ সালের চেয়েও ফল খারাপ হয়েছে মোদী শিবিরের। ওই বছরের নির্বাচনে বিজেপি একাই ৩০৩ আসনে জয়ী হয়েছিল।


আর এবারের ভোটের সর্বশেষ ফলে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এগিয়ে আছে ২৪০ আসনে। কংগ্রেস একক ভাবে এগিয়ে আছে ৯৯ আসনে। এনডিএ জোট পেয়েছে ২৯০ এর কিছু বেশি আসন, আর ইন্ডিয়া জোট ২৩০ পেরিয়েছে।


ভোটের ফলে মোদীর জোট জয়ের পথে থাকলেও বুথ ফেরত জরিপে যে বিপুল বিজয়ের আভাস দেওয়া হয়েছিল, তা হয়নি।


এক দশকের মধ্যে এই প্রথম মোদীর দল বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাচ্ছে। তারা লোকসভায় এককসংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্যপ্রয়োজনীয় ২৭২ আসন পাচ্ছে না। অথাৎ, কেন্দ্রে সরকার গড়তে দলটিকে এখন এনডিএ শরিক ছোট দলগুলোর ওপর নির্ভর করতে হবে।


ওদিকে, কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের বিস্ময়কর ভাল ফলাফলও বিজেপি শিবিরের বিপুলবিজয়ের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করেছে।


অনেক নির্বাচন পর্যবেক্ষকই বিরোধী জোট ইন্ডিয়াকে শক্তিশালী অবস্থানে উঠে আসতে দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বেশ কয়েকটি রাজ্যের ভোটে ইন্ডিয়া জোটের হিসাব পাল্টে গেছে। দিল্লিতে কংগ্রেস সদর দপ্তরেরবাইরে এরই মধ্যে উল্লাস শুরু করেছে কংগ্রেস।


বিরোধী শিবিরের ভালোফলে অনেকটাই বিপাকে পড়েছে বিজেপি। এরকম পরিস্থিতিতে ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন করতে পারবে কি না সে প্রশ্নও সামনে আসছে।


কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এরই মধ্যে বিজেপি’র ভোটের ফল নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। মঙ্গলবার সাংবাদিকদেরকে তিনি বলেছেন, ‘‘দেশের মানুষ মোদী এবং বিজেপি’কে শাস্তি দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছে।”


অনেকেই ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনকে মোদীর কয়েক দশকের প্রধানমন্ত্রীত্বের ওপর গণভোট হিসাবেই দেখেছেন। যে প্রধানমন্ত্রীত্বের আমলে মোদী ভারতে জনজীবনের বিভিন্ন বিষয়ে রূপান্তর ঘটিয়েছেন। সেদিক থেকে এবারের ভোটের ফলে গোটা ভারতজুড়েই বিজেপি বিষণ্ন।


বিজেপি সদরদপ্তরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও কোনও জৌলুস দেখা যাচ্ছে না। মোদী-মোদী স্লোগানে মুখরিত হলেও লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার ব্যর্থতা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপি’র জয় উদযাপন অনুষ্ঠানে। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেবল একটি ছোট পোস্ট করে জনতাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী।


এবারের লোকসভা নির্বাচনে সাতটি ধাপে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেখা গেছে অনেক নতুন ধারাও। নারীদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। মোট ৯৭ কোটি নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছে ৬৪ কোটি ২০ লাখের মতো ভোটার।


১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত চলা ভোটে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করে ভোটাররা ভোট দিয়েছে। বিজেপি আর এর প্রতিপক্ষের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে।


মোদী দেশজুড়ে নির্বাচনী প্রচারে তার সরকারের নানা অর্জন তুলে ধরেছিলেন। দেশের ভেতরে তার জনকল্যাণ স্কিম থেকে শুরু করে বিশ্বে ভারতের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা পর্যন্ত সবকিছুই তিনি রেখেছিলেন জনগণের সামনে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজ করেনি তার ম্যাজিক।

দুই দফা ভোটের পরই ভোটারদের মনোভাব ও পারিপার্শ্বিক চিত্র ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছিল। ক্ষমতা হারানোর ভয় যেন পেয়ে বসেছিল বিজেপি-কে।

মোদীর নিরঙ্কুশ জয় সহজসাধ্য না হওয়ার আশঙ্কা বাস্তব হওয়ার পেছনে কাজ করেছে কিছু কারণ।

বেকারত্ব, ক্রয়ক্ষমতা হারানো ও ব্যক্তিগত সঞ্চয়ে টান পড়ার মুখে ভোটাররা বিজেপি বিমুখ হয়েছে। আবার ব্যক্তি মোদীর জনপ্রিয়তায় ভাটা না পড়লেও তার দলের প্রার্থীরা অতটা জনপ্রিয় ছিলেন না। বিজেপি’র প্রার্থীদেরকে ভোটাররা সরাসরি অবজ্ঞা না করলেও তারা ভোটারদের এক ধরনের ঔদাসীন্নের মুখে পড়েছিলেন।

ওদিকে, মোদীর মুসলিমবিরোধী অবস্থান এবং সরাসরি আক্রমণ করে কথা বলাও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে ভোটে। কংগ্রেস পার্টিকে মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে তিনি সমালোচনা করেছিলেন।তার চরম উসকানি দেওয়া বক্তৃতা তার পদ-পদবির জন্য অবমাননাকর হয়েছে।

বিরোধীদলগুলোও মোদীর আমলের বেকারত্ব, জীবনযাত্রা ব্যয় বৃদ্ধি থেকে শুরু করে সবকিছুই জনগনের সামনে তুলে ধরেছে। দেশকে একনায়কতন্ত্রে নিমজ্জিত হওয়া থেকে ঠেকানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে তারা।

ওদিকে, ভোটের আগে দিয়ে বিজেপি বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন বাড়ানোও ভোটে তাদের খারাপ ফলের পেছনে ভূমিকা রেখে থাকতে পারে। বহু বিরোধীদলীয় নেতা এবং সরকারের সমালোচক সাম্প্রতিক সময়ে জেলে গেছেন।

এর মধ্যে আছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও। যাকে গত এপ্রিলে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে কাস্টডিতে নেওয়া হয়। পরে অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছিলেন।

এতসবকিছুর প্রেক্ষাপটে এবারের নির্বাচনে ভোটারদের মোহগ্রস্ত করার মতো কিছু বিজেপি’র ছিল না। বরং জনগণের সামনে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের যথেষ্ট নজির আছে।

অন্যদিকে, বিরোধীরা নতুন আত্মবিশ্বাসে উজ্জীবিত হয়েছে। সে কারণেই আগেরবারের মতো ফল বিজেপি এবার করতে পারেনি। এসেছে পরিবর্তন।


মন্তব্যঃ

দুঃখিত, কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি!

নতুন মন্তব্য করুন:

ad
সকল খবর জানতে ক্লিক করুন
ad