পেনসিলভানিয়া, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

সর্বশেষ:
জামায়াতে যোগ দিলেন অর্ধশতাধিক বিএনপি–জাপা নেতাকর্মী জাপা ও জেপির নেতৃত্বে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ৮ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস আজ আমার হায়াত কমিয়ে হলেও খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে দেন জোট গঠনের বিষয়ে যা বললেন সারজিস বিএনপির সঙ্গে ২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করল বাংলাদেশ লেবার পার্টি ১০ ডিসেম্বর তফসিল নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে না, বরং পুনর্গঠনের পথে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রয়েছে যেসব আধুনিক সুবিধা দেশে এল তারেক রহমানের ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার গাড়ি, বিআরটিএতে নিবন্ধন সম্পন্ন পুলিশ কমিশন গঠন হচ্ছে, অধ্যাদেশ অনুমোদন নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে আম জনতার দল, চেয়েছে প্রজাপতি প্রতীক অক্সফোর্ড ইউনিয়নের আমন্ত্রণ পেলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন কমান্ডো এনএসজিসহ ২৪ ভারতীয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

“রাসেল ভাইপার কি এ সময়ের ঢোলকলমি”

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৩ পিএম, ২৮ জুন, ২০২৪

শির দশকের শেষ দিকের কথা। যখন স্বৈরশাসক এরশাদের উপর জনগণের ক্রোধের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো এবং তা কোন ভাবেই কমানো যাচ্ছিলো না। তখন মানুষের ক্ষোভ-ক্রোধ একটি চূড়ায় অর্থাৎ এরশাদের মাথায় পুঞ্জীভূত হতে হতে বিপুল ভার তৈরি করছিলো। সেই ভার এরশাদের একার পক্ষে বহন করা দুষ্কর হয়ে উঠেছিলো। তাঁর মাথা ছিলো চিকন বুদ্ধিতে বোঝাই। তিনি মানুষের ক্রোধ বিস্তীর্ণ সমতলে ছড়িয়ে দেয়ার বুদ্ধি আঁটলেন।তারপর কোন একদিন শত্রু হিসেবে দেখিয়ে দেয়া হয়েছিলো সর্বত্র সুলভ এবং প্রয়োজনীয় একটি গাছকে। গাছটি গ্রাম এলাকায় বেড়া দেয়া এবং মাটির ভাঙন রোধ করার কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো। গরু ছাগল এর পাতা খেতো না বলে কৃষি জমির বেড়া হিসেবে বেশ কার্যকর ছিলো। শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবেও এর কদর ছিলো। কিছু ভেষজ গুণও অবশ্য ছিলো।গাছটির নাম ঢোলকলমি।সে সময় নিরীহ ঢোলকলমি গাছকে হঠাৎ খুনি রূপে হাজির করা হয়েছিলো। বলা হয়েছিল, এই গাছে এমন এক পোকা জন্মে যা মারাত্মক প্রাণঘাতি। এর কামড়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ মারা যায়। এমনকি স্পর্শ করলেও মৃত্যু হতে পারে। এ যেন ভয়ংকর মহামারির আলামত। সেই প্রচারণা কেবল মুখে মুখে নয়, রেডিও টেলিভিশন পত্রিকা অর্থাৎ সকল গণমাধ্যমে চলতে থাকলো। কোথায় কতজন ঢোলকলমি গাছের পোকার আক্রমণে মারা গেলো সে খবরও ফলাও করে প্রচার হতে থাকলো। প্রশাসনিক তৎপরতাও ছিলো দেখার মতো।এর প্রভাব ছিলো দ্রুত এবং সর্বব্যাপী। গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে মিশে থাকা বন্ধু গাছটিকে নিশ্চিহ্ন করতে হামলে পড়েছিলো সবাই। কেবল গ্রাম নয়, শহরেও ছড়িয়ে গিয়েছিলো আতঙ্ক। এ গাছের সমূল বিনাশে শহরবাসীও তৎপর হয়ে উঠেছিল। এর ফলে এরশাদ সম্ভবত কিছু সময়ের জন্য হলেও ক্রোধের কেন্দ্র থেকে কিছুটা বাইরে থাকতে পেরেছিলেন। যদিও শেষরক্ষা হয়নি।


মানুষ যখন কোন কারণে সংক্ষুব্ধ থাকে, তার হাত নিশপিশ করে, রাগ ঝাড়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠে। তখন তাকে স্থির করার জন্য কিছু একটাকে তার সামনে শত্রু হিসেবে হাজির করতে হয়। যেন ভয়ানক আক্রোশ নিয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে। তাকে মেরে-কেটে বিনাশ করে তারপর শান্ত হতে পারে। এমন কি, যে কারণে ক্রোধ জেগেছিলো, সে কথাও ভুলে যেতে পারে। এখন দেশের মানুষের মনে হয়তো সেই চাহিদা তৈরি হয়েছে। কাজেই সরবরাহ করতেই হবে।

কি সরবরাহ করা যায়? এমন কিছু লাগবে যা সর্বত্র সুলভ। এখন বর্ষাকাল। সাপ হতে পারে সেই কাঙ্ক্ষিত বস্তু। এ মৌসুমে সাপের আবাসে পানি ঢুকে যায় বলে তারা প্রায়শ লোকচক্ষুর সামনে এসে পড়ে। বিষয়টি স্বাভাবিক। কিন্তু স্বাভাবিক বিষয়কে অস্বাভাবিক হিসেবে হাজির করে- 'এ মুহূর্তে সাপই সবচেয়ে ভয়ংকর' এই কথাটা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে কিল্লাফতে। চন্দ্রবোড়া (কোথাও উলুবোড়া বলে) এক্ষেত্রে উপযুক্ত সাপ। তবে নামটি ইংরেজিতে বললে আতংক ছড়ানো সহজ হবে। কাজেই বলতে হবে 'রাসেল'স ভাইপার।'প্রশ্ন উঠতে পারে, অন্য কোন সাপ না হয়ে কেন রাসেল'স ভাইপার? জবাবে বলতে হয় দ্রুত অধিক সংখ্যায় বংশবিস্তারের কারণে এর সহজপ্রাপ্যতা। এই মনোনয়নের ফায়দাও অনেক। রাসেল'স ভাইপারের সাথে সাথে নিশ্চয় আরো বহু ধরনের সাপ মারা হবে। মানুষ সাপ মেরে রাগ ঝাড়বে, শান্ত হবে। এর আরও প্রাপ্তি আছে। সাপের বিনাশ ঘটাতে পারলে ইঁদুর বাড়বে। ফসলি জমির শত্রু ইঁদুর রাসেল'স ভাইপারই বেশি খায়। যদিও বিষাক্ত হিসেবে এই সাপের অবস্থান ১ নম্বরে নয়। 


সাপ নিধনের ফলে ব্যাপক শস্যহানি হবে; খাদ্যমূল্য ক্ষুধা ও অসুস্থতা বাড়বে। স্বল্প আয়ের মানুষেরা আরও দরিদ্র হবে। অবশ্য এর মাঝে একটি পক্ষের লাভও আছে। হিসাব বোঝা কঠিন কিছু নয়। মানুষ কেবল চাল কিনতে নয়, ঔষধ কিনতেও দৌড়াবে। ঔষধে রোগ প্রশমিত হলেও শরীর সবল হবে না। এ কথা কে না জানে, শক্তিহীন মানুষ বিক্ষোভ আন্দোলনে অক্ষম।প্রাপ্তি আরও আছে। ক্ষুধার্ত মানুষের নামমাত্র খাদ্য খেয়ে প্রাণ বাঁচানোর প্রচেষ্টা মুক্তি অবধি যেতে পারবে না। সে বেঁচে থাকলেই খুশী। সেই সুযোগে কতিপয় কিংবা একটি ক্ষুদ্র পক্ষ কেবল পুকুর নয়, সাগর চুরি করেও বহাল তবিয়তে থাকতে পারবে।মাঝখান দিয়ে কঠিন হবে কৃষি, বিপন্ন হবে প্রকৃতি ও পরিবেশ। তা হোক, এর দ্বারা আরও উন্নয়নের সুযোগতো তৈরি হবে! দারিদ্র্য বাড়াতে না পারলে উন্নয়নের সুযোগ কোথায়? সে জন্য সাপ সংহার হয়তো তেমন কিছু নয়।

…. তথ্যসূত্র মানবজমিন॥

মন্তব্যঃ

দুঃখিত, কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি!

নতুন মন্তব্য করুন:

ad
সকল খবর জানতে ক্লিক করুন
ad