পেনসিলভানিয়া, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

সর্বশেষ:
জামায়াতে যোগ দিলেন অর্ধশতাধিক বিএনপি–জাপা নেতাকর্মী জাপা ও জেপির নেতৃত্বে বৃহত্তর রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ৮ ডিসেম্বর স্বৈরাচার পতন দিবস আজ আমার হায়াত কমিয়ে হলেও খালেদা জিয়াকে সুস্থ করে দেন জোট গঠনের বিষয়ে যা বললেন সারজিস বিএনপির সঙ্গে ২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করল বাংলাদেশ লেবার পার্টি ১০ ডিসেম্বর তফসিল নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ছে না, বরং পুনর্গঠনের পথে খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে রয়েছে যেসব আধুনিক সুবিধা দেশে এল তারেক রহমানের ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার গাড়ি, বিআরটিএতে নিবন্ধন সম্পন্ন পুলিশ কমিশন গঠন হচ্ছে, অধ্যাদেশ অনুমোদন নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে আম জনতার দল, চেয়েছে প্রজাপতি প্রতীক অক্সফোর্ড ইউনিয়নের আমন্ত্রণ পেলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন কমান্ডো এনএসজিসহ ২৪ ভারতীয় সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি

দেড় দশকে দেশে নার্সিং প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৪২১ শতাংশ তারপরেও নার্সের ঘাটতি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৩:২৪ এএম, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

দেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতে জনবল সংকটের চিত্র নতুন নয়। দীর্ঘদিন ধরেই প্রয়োজনের তুলনায় কম জনবল নিয়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফারি ও অন্যান্য সহায়ক খাত—সব জায়গাতেই কর্মী সংকট রয়েছে। তবে এ সংকট সবচেয়ে প্রকটভাবে দেখা যায় নার্সদের ক্ষেত্রে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মানদণ্ড অনুযায়ী, দেশে প্রয়োজনীয় নার্সের তুলনায় বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৮ শতাংশ। অর্থাৎ ঘাটতি রয়ে গেছে প্রায় ৮২ শতাংশ। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, গত দেড় দশকে নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪২১ শতাংশ।


স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বাংলাদেশ হেলথ ওয়ার্কফোর্স স্ট্র্যাটেজি ২০২৪-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে দেশে মোট নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের (নার্সিং ও মিডওয়াইফারি) সংখ্যা ছিল ৮৭টি, ২০১৬ সালে ছিল ২২১টি, ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯৭টিতে। বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের সর্বশেষ তথ্যানুসারে চলতি বছর প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৫৩টিতে। অর্থাৎ দেড় যুগে তা ৪২১ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ৭০টি সরকারি এবং ৩৮৩টি বেসরকারি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতি বছর ভর্তি হচ্ছেন ৩৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী।



ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, সেবার ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হওয়া উচিত ১:৩। অর্থাৎ একজন চিকিৎসকের সঙ্গে কাজ করবেন তিনজন নার্স। এ অনুপাত বজায় থাকলে চিকিৎসাসেবা হবে সুষ্ঠু ও মানসম্পন্ন। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশে বর্তমানে অন্তত ৩ লাখ ১০ হাজার ৫০০ নার্স থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে আছেন মাত্র ৫৬ হাজার ৭৩৪ জন। অর্থাৎ ডব্লিউএইচওর মানদণ্ড অনুযায়ী মানসম্মত চিকিৎসাসেবার জন্য যে সংখ্যক নার্স প্রয়োজন, তার মাত্র ১৮ শতাংশ রয়েছে দেশে, যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৮২ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব আসাদুজ্জামান জুয়েল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশে নার্সিংয়ের জনবল সংকট রয়েছে। অপরদিকে নার্সিং ইনস্টিটিউট ও কলেজের সংখ্যা বাড়ছে। বেশি বাড়ছে বেসরকারি পর্যায়ে। আমরা সামগ্রিকভাবে কোয়ান্টিটির চেয়ে কোয়ালিটির দিকটি মাথায় রাখছি। বিগত সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষার মান বজায় রাখছে। তবে ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়ে কিছু প্রতিষ্ঠান মানদণ্ড মেনে চলছে না। আমরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করছি। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। লিখিত আকারেও দিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুতই এ সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের চিকিৎসাসেবার মান অসন্তোষজনক হওয়ার অন্যতম কারণ নার্স সংকট। নার্সিং ইনস্টিটিউটের সংখ্যা বাড়লেও সেগুলোর গুণগত মান বাড়েনি। বছরে ৩৬ হাজারের বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও পাস করে বের হওয়ার পর বেশির ভাগই থাকছে বেকার। তাদের একটি অংশ প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়োগ পাচ্ছে। তবে দক্ষতা ও স্বল্প বেতনের কারণে সেখানেও তৈরি হচ্ছে অনাগ্রহ। সরকারি অনেক পদও খালি। নিয়োগ কার্যক্রম-সংক্রান্ত পরিকল্পনার অভাবে নার্সদের একটি বড় অংশ পদ ফাঁকা রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের (ডব্লিউএফএমই) সাবেক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ও ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের সঠিক পরিকল্পনা দরকার। বর্তমানে কতজন নার্স প্রয়োজন এবং ভবিষ্যতে কী পরিমাণ নার্সের প্রয়োজন হতে পারে। কোন কোন বিশেষায়িত ক্ষেত্রে নার্সের প্রয়োজন রয়েছে সেগুলো নিয়ে সরকারি পর্যায়ে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা দরকার। প্রতি বছর যে ইনস্টিটিউটগুলোয় হাজার হাজার নার্স তৈরি হচ্ছে, তারা সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করছে কিনা সে বিষয়ে তদারকি জরুরি। এসব ইনস্টিটিউটের বেশির ভাগ নার্সই প্রশিক্ষিত না। সেগুলোয় পর্যাপ্ত শিক্ষক ও প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট নেই। আগামী দিনে নার্সিংয়ের ঘাটতি পূরণে বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। কর্মরত নার্সদেরও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নার্সিং পাস করার পর তাদের রেজিস্ট্রেশন দেয়ার আগে একটি পরীক্ষা নেয়া জরুরি।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মেডিকেল কলেজে কর্মরত এক নার্স বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মৌলিক নার্সিং সেবার কাজের তালিকা বেশ দীর্ঘ। গতানুগতিক কাজের বাইরেও আরো বিশেষায়িত অনেক কাজ রয়েছে। অনেক ধরনের কাজই আমরা জানি না। আমাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয় না। আবার অতিরিক্ত চাপও সামলাতে হয়। হয়তো ছয়জন রোগীকে সেবা দেয়ার কথা, কিন্তু দিতে হয় ৫০ জনকে। স্বাভাবিকভাবেই সব রোগীকে প্রয়োজনীয় সময় দেয়া সম্ভব হয় না। এতে রোগী সন্তুষ্ট হয় না। সেবার মানেও ঘাটতি দেখা দেয়।’

জনবল ঘাটতি নিরসনে নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মোমেন উদ্দিন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘নার্সিং কলেজ ও ইনস্টিটিউটের সবকিছুর মনিটরিংয়ের দায়িত্ব আমার না। তবে নার্সিংয়ে জনবল সংকট সংক্রান্ত যে সমস্যা রয়েছে তা সমাধানের চেষ্টা করছি। সর্বশেষ আমাদের সাড়ে তিন হাজার নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। আরো সাড়ে তিন হাজার নার্স নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সব ঘাটতি একবারে পূরণ করা সম্ভব না। সরকারি পর্যায়ে যে ঘাটতি রয়েছে, সেগুলো আমরা পূরণের চেষ্টা চালাচ্ছি।’

মন্তব্যঃ

দুঃখিত, কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি!

নতুন মন্তব্য করুন:

ad
সকল খবর জানতে ক্লিক করুন
ad